শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ, ১৪৩১
অনলাইন ডেস্ক।।
মোবাইল কেনার টাকা জোগাড়ের জন্য ৫ বছরের মোবাশ্বের হাসানকে অপহরণ করছিল সিয়াম হোসেন মিঠু (১৬)। শিশুটিকে অপহরণ করে ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে ভালো মোবাইল ফোন কেনাই ছিল তার লক্ষ্য। তবে অপহরণের পর শিশুটি বাড়িতে যাওয়ার জন্য বিরক্ত করায় প্রথমে মিঠু তার গলা টিপে ধরে। এতে শিশুটি অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে জবাই করে হত্যা করে।
সোমবার (১১ মে) মিঠুকে পঞ্চগড়ের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালতে হাজিরা করা হয়। সেখানে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা জানিয়েছে মিঠু। এরপর তাকে নিরাপদ হেফাজতে পাঠানো হবে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে তাকে পঞ্চগড় জেলা কারাগারের শিশু ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। এর আগে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদেও সে মোবাশ্বেরকে অপহরণ ও হত্যার একই বর্ণনা দিয়েছে।
দেবীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম জানান, মিঠু জিজ্ঞাসাবাদে মোবাশ্বেরকে গলা কেটে হত্যার কথা স্বীকার করে। তার দেওয়া তথ্যেই শিশুটির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। সে যে ধারালো দা নিয়ে শিশুটির গলা কেটে হত্যা করে আলামত হিসেবে সেটিও উদ্ধার করা হয়েছে।
পঞ্চগড় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী জানান, গ্রেফতার কিশোর বখাটে ধরনের। সে শিশুটিকে অপহরণ করে তার পরিবারের কাছে ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করতে চেয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিপণের টাকা দিয়ে ভালো মোবাইল ফোন কিনবে। শিশুটি তাকে বিরক্ত করা শুরু করলে সে শিশুটিকে গলা টিপে অজ্ঞান করে। এক পর্যায়ে অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু শিশুটি বেঁচে থাকলে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে অন্যের বাড়ি থেকে দা এনে শিশুটির গলা কেটে হত্যা করে।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (০৮ মে) পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের নায়েকপাড়া গ্রামের আশিকুর রহমান স্বপনের ছেলে। একই গ্রামের আলমের ছেলে মোবাশ্বেরকে বাইসাইকেলে করে ডোমার উপজেলার ভোগডাবুড়ি এলাকায় ফুপুর বাড়িতে নিয়ে যায়। বিষয়টি এলাকার দুয়েকজন দেখতে পায়। মোবাশ্বেরের বাবা ছেলেকে খোঁজাখুজি করে না পেয়ে শনিবার দেবীগঞ্জ থানায় একটি জিডি করেন। দেবীগঞ্জ থানা পুলিশ শনিবার রাতেই মিঠুকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মিঠু তাকে সাইকেলে করে ফুপুর বাড়িতে নিয়ে যায় এবং সেখান বেতবাগানে নিয়ে গিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ডোমার থানা পুলিশের সহযোগিতায় দেবীগঞ্জ থানার পুলিশ রবিবার (১০ মে) সকালে ডাঙ্গাপাড়া বনবিভাগের একটি বেতবাগান থেকে শিশিুটির লাশ উদ্ধার করে।
ওই শিশুর বাবা আলম বলেন, ‘আমাদের বাড়ি একই গ্রামে। তাদের সঙ্গে ঝগড়া বিবাদও নেই। কিন্তু তারপরও কেন সে আমার ছেলেকে হত্যা করলো বলতে পারছি না। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
চিলাহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল মোস্তাহারুল হাসান নয়ন জানান, মিঠু ওই শিশুটিকে সাইকেলে করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি এলাকাবাসী দেখতে পায়। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় কিন্তু সে অস্বীকার করে। পরে তাকে আমি দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে তাকে সোপর্দ করি।